তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমাবাজি ও ভাঙচুরের অভিযোগ, তৃণমূলেরই অন্য নেতার বিরুদ্ধে। উত্তপ্ত এলাকা।
সৌমিত্র গাঙ্গুলি, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমানঃ ফের তৃণমূলের নিজস্ব দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। চলতি বছরে দুর্গাপুর পুরসভার নির্বাচন রয়েছে তার আগে দলের এই দ্বন্দে বিব্রত ঘাস ফুল শিবির। গতকাল দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত দেবীনগর এলোকায় এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও বোমাবাজি দুষ্কৃতীদের। দুটি মোটরবাইক চেপে জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী গতকাল রাতে তৃণমূল কর্মী পরিমল রায়ের বাড়িতে আসে ব্যাপক বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ; ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় তার বাড়িতে। পরিমলবাবু তখন, স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে পরিবারের লোকজন। ঘটনার সূত্রপাত পুরোনো একটি টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ বছর দেড়েক আগে পরিমলের এক বন্ধু কুড়ি হাজার টাকা ধার নিয়েছিল পরিমলের কাছ থেকে। এক বছরের মাথায় দশ হাজার টাকা, পরে আরো তিন হাজার টাকাও শোধ করে দেয় পরিমলের ঐ বন্ধু। কিন্তু মেয়েকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাকি টাকা সে চায় ঐ বন্ধুর কাছে। কিন্তু মেঘনাথ গড়াই নামে ঐ বন্ধু এবার বাকি টাকা নিতে হলে স্থানীয় বেনাচিতি ধুন্দরা প্লট তৃণমূল পার্টি অফিস যেতে হবে বলে জানিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু পরিমল যেতে রাজি হয়নি। তার বক্তব্য যেহেতু দুই বন্ধুর মধ্যে ব্যাক্তিগত টাকা লেনদেনের ব্যাপার এটা। তাই পার্টি অফিসে গিয়ে কি হবে? পরিমলের সাথে গতকাল সকালেই মেঘনাথের প্রথম কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সামান্য হাতাহাতি হওয়ার পর বিষয়টি তখনকার মতো শান্তও হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল রাতে আচমকাই দুষ্কৃতীরা দেবীনগরে তৃণমূল কর্মী পরিমল রায়ের বাড়িতে চড়াও হয়। ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে। বোমাবাজির অভিযোগও ওঠে। তৃণমূল কর্মী পরিমল রায়ের অভিযোগ, আসলে রাগটা অন্য কারণে, এই অঞ্চলে খাস জমি দখল থেকে শুরু করে তোলাবাজি সবটাই করে স্থানীয় পনেরো নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কনভেনার গৌরাঙ্গ বাগদির অনুগামীরা।
আর মেঘনাথ গড়াই গৌরাঙ্গর অনুগামী, বারবার সেই জন্য ধারের টাকা পাওয়ার জন্য তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে পাঠানো হয় তাকে। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূল কর্মী বিট্টু সান্যালের নামও। গোটা ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত দেবীনগর এলাকায়। পুলিশ এসে কোনোক্রমে সামাল দেয় পরিস্থিতি। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের পনেরো নম্বর ওয়ার্ডের কনভেনার গৌরাঙ্গ বাগদি। দলের কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এটা নয়, অহেতুক দলকে জড়ানোর পাল্টা অভিযোগ করেছেন এই তৃণমূল নেতা। গোটা ঘটনায় টানটান উত্তেজনা দুর্গাপুরে। তৃণমূল কর্মী পরিমল রায়ের অভিযোগ, পাড়া পড়শিরা বলছেন যারা বাইকে চেপে এসেছিল তারা নাকি গৌরাঙ্গ বাগদি ও বিট্টু সানাল্যের নাম ধরেই চিৎকার করছিলো, হুমকি দিচ্ছিল। এইদিকে মেঘনাথ গড়াই নামে ঐ তৃণমূল কর্মী দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি বলে জানা গেছে। চলতি বছরে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন রয়েছে। যদি এদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ভোটের আগে এলাকার মানুষের মধ্যে দল সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অভিযোগ করেছে দেবীনগর এলাকার তৃণমূল কর্মী পরিমল রায়ের। এইদিকে এই ইস্যুতে বিরোধীরা সুর চড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ শান্ত দুর্গাপুরকে অশান্ত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আর শাসকের অন্দরের দ্বন্দে সেই পরিস্তিতি আরো অগ্নিগর্ভ হচ্ছে। বুধবার রাতে খোদ তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমাবাজি ভাঙচুরের ঘটনায়, সেই ছবিটা অনেকটা স্পষ্ট হলো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।