তাল খেয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু? গুজব ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়!
বাঁকুড়া: “সাপের কামড় দেওয়া তাল খেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেল মানুষ” তাল নিয়ে এমন মহা গুজব জঙ্গল মহল জুড়ে। আষাঢ় শ্রাবণের শুরু থেকে তাল পাকতে শুরু করে। পাকা তাল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু উপাদেয় খাদ্য তৈরি হয়। কমবেশি সব সম্প্রদায়ের মানুষই তাল পাকা দিয়ে তৈরী বিভিন্ন সুস্বাদু খাদ্য যেমন তালের রুটি, পরোটা, লুচি, বিভিন্ন ধরনের পিঠে পুলি খেয়ে থাকেন। তবে উৎকল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষজন তালের তৈরি বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী একটু খেয়ে থাকেন । অন্যভাবে বলতে গেলে উৎপল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তালের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

পাকা তাল ছাড়িয়ে তালের ভেতরের পাকা শাঁস থেকে তালের মাড়ি তৈরি করে সেই মাড়ি দিয়ে পিঠে পুলি বানানোতে উৎকল সম্প্রদায়ের মানুষের বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। তবে এবার তালের মরসুম শুরু হতেই জঙ্গল মহল জুড়ে ছড়িয়েছে মহা গুজব। “তালের পিঠে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে “। জঙ্গল মহল জুড়ে লোক মুখে ছড়িয়েছে, ” পাকা তালে কামড় দিয়েছিল সাপে। সেই তালের মাড়ি দিয়ে তৈরী খাবার খেয়ে কয়েক জন অসুস্থ এবং কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে” এমন গুজব জঙ্গল মহল জুড়ে। জঙ্গল মহলের সারেঙ্গা সিমলাপাল রাইপুর, গোয়ালতোড় এমন কি পশ্চিম মেদিনীপুরেও ছড়িয়েছে এই গুজব।

গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় গুজব রটেছে তালের পিঠে খেয়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। মৃতের সংখ্যা এবং ঘটনার স্থান আবার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম। আর এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছেও ঘটনার কথা জানতে চেয়ে সকাল থেকে ফোন আসছে একাধিকবার। কোথাও আবার রটেছে তাল পিঠে খেয়ে সারেঙ্গায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের এবং কয়েকজন অসুস্থ আছেন। আবার কখনো রটেছে তল পিঠে খেয়ে নাকি অসুস্থ হয়েছেন সারেঙ্গা ব্লকের খামানি এলাকার একই পরিবারের পাঁচজন, একজন নাকি মারাও গেছেন। কখনো আবার জানতে চাওয়া হচ্ছে পাকা তালের তৈরী খাবার খেয়ে গড়গড়্যা এলাকায় নাকি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আবার কখনো শোনা যাচ্ছে রাইপুর ব্লক এলাকায় এই রকম ঘটনা ঘটেছে। শুধু সারেঙ্গা নয় গোয়ালতোড়, পশ্চিম মেদিনীপুরে না কি ঘটেছে এমন ঘটনা। আর তা জানতে চেয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছেও আসছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের ফোন। তালের তৈরী খাবার খেয়ে অসুস্থ এবং মৃতের সংখ্যার গুজব বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ছড়িয়েছে। যদিও পুরো বিষয় টি গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। সারেঙ্গা ব্লক প্রশাসন ও সারেঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এমন কোন ঘটনার তাদের জানা নেই।

এই প্রসঙ্গে ব্লক উৎকল সোসাইটির সভাপতি তারাশঙ্কর মহাপাত্র বলেন “এই ধরনের একটা গুজব কয়েকদিন ধরে চলছে, তবে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই, ইচ্ছা করেই হয়তো কিছু মানুষ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের ঘটনা রটাচ্ছেন বা বলে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষ বিভিন্ন জায়গায় এগুলো বলছেন, আসলে আমরা যা খবর নিয়েছি তাতে কোথাও এ ধরনের ঘটনার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করব গুজব ছড়াবেন না গুজবে কান দেবেন না। বছরের সুস্বাদু ফল তাল তালের তৈরি বিভিন্ন খাবার নিজেদের মতো খান কোন অসুবিধা নেই”।

