না ফেরার দেশে উপেন কিস্কু!

সঞ্জয় ঘটক, বাঁকুড়া: দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পড়লো ছেদ, না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাঁকুড়ার জঙ্গল মহলের সিপিআইএম নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন কিস্কু। জানাগেছে, বুধবার রাতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নি:স্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

উল্লেখ্য, সত্তরের দশকে জেলার জঙ্গল মহলে কেন্দুপাতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উপেন কিস্কুর রাজনৈতিক জীবন শুরু। তৃণমূল স্তর থেকে রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন উপেন কিস্কু। পার্টি অন্ত:প্রাণ  সিপিআইএম নেতা উপেন কিস্কু  সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে কাজ করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায়  প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরী ছাড়েন। ১৯৭৭ সালে প্রথমবার রাইপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং জয়ী হন। তারপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা আটবার ওই কেন্দ্রের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন উপেন বাবু। শুধু বিধায়ক নন ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তর। এলাকার উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেন তিনি।

রাইপুরের খড়িগেড়িয়াতে কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ উদ্যোগ নেন। এছাড়া তাঁর বিধানসভা এলাকায় আশ্রমিক বিদ্যালয়, ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস, স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মানে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা নেন। গ্রাম স্তর থেকে রাজ্য স্তরে দলীয় কর্মীদের কাছে তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা ছিল বেশ ভালো। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, সমিতি, সমাবেশে উপেন বাবুর সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষার বক্তব্য দলীয় কর্মীদের কাছে ছিল খুবই প্রিয়। জঙ্গলমহলে যখন মাওবাদীদের দাপাদাপি একের পর এক সিপিআইএম কর্মী সমর্থক থেকে পুলিশকর্মীকে মাওবাদীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তখনো অকুতোভয় এই বামপন্থী নেতা উপেন কিস্কু প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাহস জুগিয়েছেন দলীয় কর্মীদের।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে প্রয়াত উপেন কিস্কুর মরদেহ সিপিআইএম বাঁকুড়া জেলা দপ্তরে আনা হলে সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত দলীয় নেতৃত্ব।

এরপর, তাঁর মরদহবাহি শকট পৌঁছায় তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামের আঁতুড়ঘর রাইপুরে। সেখানে দলীয় পতাকা অর্দ্ধনমিত রেখে প্রয়াত উপেন কিস্কুর মরদেহ নিয়ে শোক মিছিলে দলীয় নেতা কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পথ হাঁটেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। রাইপুর ল্যাম্পস্, কৃষ্ণমোহিনী হাই স্কুল, সবুজ বাজার ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে যখন সেই শোক মিছিল পৌঁছায় তখনও কাতারে কাতারে মানুষ তাঁদের প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো একটিবার দেখার জন্য ভীড় জমিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিরোধীতা ভুলে প্রয়াত সিপিআইএম নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোৎস্না মাণ্ডি, রাইপুরের বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুরা। প্রয়াত উপেন বাবুকে শ্রদ্ধা জানান অগনিত সাধারণ মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *