২০ বছর অপেক্ষা ও আইনি লড়াইয়ের অবসান, জেলাশাসকের নির্দেশে বাড়ির পথের হদিস

পশ্চিম মেদিনীপুরঃ- বাড়ির পথে বেআইনি দখলদারি পর্যবেক্ষণ সরকারি আধিকারিকদের এ যেন যুদ্ধ জয়! দীর্ঘ ২০ বছরের অপেক্ষা ও একাধিক আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরীর নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানের পর নিজের বাড়িতে প্রবেশের পথ দখলদার মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুরের সোনাখালি সয়লার বাসিন্দা মোহনচন্দ্র সামন্ত।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৯-২০০০ সালে। ঐ সময়ে দাসপুরের সোনাখালি সয়লার বাসিন্দা মোহনচন্দ্র সামন্ত নিজের বাড়ি তৈরি করেন। বাড়ির সামনে ছিল রাস্তা ও পিডবলুডি-র জায়গা। কিন্তু পিডবলুডি-র জায়গা ক্রমশ দখল হয়ে বিভিন্ন নির্মাণ গড়ে ওঠে। তাঁর বাড়িতে প্রবেশের আর কোনো পথ থাকে না।  পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা না হওয়ায় ২০০৩ সালে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত প্রশাসনকে পিডবলুডি-র জায়গা দখলদার মুক্ত করে মোহনচন্দ্রবাবুকে বাড়িতে প্রবেশের পথ করে দিতে বলে। কিন্তু তিনি বারংবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও সেই নির্দেশ আর কার্যকর হয়নি। ফলে নিকটস্থ এক কো-অপারেটিভ সোসাইটির সঙ্গে সমঝোতা করে তার পাশ দিয়ে কোনোক্রমে বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ পান তিনি। এক সময় তিতিবিরক্ত হয়ে ভেবেছিলেন বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালত ও আইনের উপরেই আস্থা রাখেন তিনি।

যে চারজন ব্যক্তি পিডবলুডি-র জায়গা দখল করে তাঁর বাড়িতে প্রবেশের অন্তরায় হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর নতুন করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন মোহনবাবু। ২০২৩ সালের ১১ ই জানুয়ারি রায় হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, আগামী ৩ মাসের মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে রিপোর্ট দিতে হবে পিডবলুডি-কে। এরপর আদালতের আদেশনামা নিয়ে বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছেন মোহনবাবু, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। তাঁর অভিযোগ, জানুয়ারি মাস থেকে তিনি ক্রমাগত বিএলআরও এবং পিডবলুডি দপ্তরে যান, কিন্তু দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তাঁকে জানান, জমির বর্তমান পরিস্থিতি, বাড়ির অবস্থানে আছে, দখলদারদের এলাকা প্রভৃতি বিষয়ে বিএলআরও সমীক্ষার রিপোর্ট না পেশ করা পর্যন্ত তিনি কিছু করতে পারবেন না। এরপর তিনি বারংবার বিএলআরও-র স্মরণাপন্ন হলেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।

এরপর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের ‘জনতার দরবার’ সম্পর্কে অবহিত হয়ে গত ৫ মে সরাসরি তাঁর দ্বারস্থ হন মোহনবাবু। তাঁর আবেদন শুনে ও আদালতের আদেশনামা খতিয়ে দেখে সমাধানের আশ্বাস দেন জেলাশাসক। এরপরেই বৃহস্পতিবার বিএলআরও প্রতিনিধি ও পিডবলুডি-র আধিকারিকরা এলাকায় সমীক্ষায় আসেন। মোহনবাবুর অভিযোগ, এই সময়ে স্থানীয় কিছু দখলদার সমীক্ষায় আসা আধিকারিকদের বিপথে চালিত করতে সচেষ্ট হলেও অবশেষে নির্দিষ্ট জায়গায় মাপজোক চালিয়ে বেআইনি দখলদার সনাক্তকরণ ও চিহ্নিতকরণ করেছেন আধিকারিকরা। ফলে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মোহনবাবুর এত বছরের অপেক্ষা অবশেষে ফলপ্রসূ হওয়ার। এই বিষয়টির কৃতিত্ব সম্পূর্ণ রূপে জেলাশাসককে দিয়ে তাঁর ‘জনতার দরবারে’র উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেছেন মোহনবাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *