২২ গজে ‘চক্ দে’; জঙ্গল মহলের হার না মানা পল্লবীর স্বপ্ন জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব।
বাঁকুড়াঃ- “জঙ্গল মহল” – নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অকৃপণ প্রকৃতির সবুজের সমারোহ। আর মনের মাঝে কখনো কখনো শঙ্কা জাগায় ফেলে আসা বারুদের গন্ধ, বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনি এবং ভারী বুটের আওয়াজ। কিন্তু, এসব কিছুর মাঝে যখন কোন গ্রামের লড়াকু মেয়ে নিজের কৃতিত্বে জঙ্গল মহলের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখে – সে লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। আজ আমরা যার কথা শোনাবো সে জঙ্গল কন্যা – পল্লবী মাহাতো। বাড়ী বনতিল্লা গ্রামে। সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খাতড়া মহকুমা শহর; তারপর বাস ধরে জেলা শহর বাঁকুড়া। এটাই পল্লবীর রোজনামচা।
ক্রিকেটার হওয়ার অদম্য বাসনা পল্লবীকে তার দৈনিক পরিশ্রমের কথা ভুলিয়ে দেয়। যদিও মেয়েদের ক্রিকেট খেলা? তাও আবার এই অজ গ্রামে? প্রতিবন্ধকতার অভাব ছিলোনা। তবে পল্লবীর অদম্য জেদ আর হার না মানা ইচ্ছেশক্তি তাকে সাফল্যের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। প্রান্তিক কৃষক পরিবারের মেয়ে পল্লবী। এলাকায় নেই মেয়েদের সাথে ক্রিকেট খেলার সুযোগ। তাই মাধ্যমিক পাশের পর সে যোগাযোগ করে খাতড়া মহকুমা ক্রিকেট সংস্থার সাথে। পরে বাঁকুড়া শহরের ‘দ্রোণাচার্য স্কুল অফ ক্রিকেট’ এর সাথে যুক্ত হয় সে। সেখানেই চলছে তার সংগ্রাম।
প্রতিদিন ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তাঁকে ক্রিকেট কোচিং নিতে যেতে হয় বাঁকুড়া শহরে। তবে নিষ্ঠা ও শ্রমের যে বিকল্প নেই তা প্রমান করেছে পল্লবী। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সাথে সাথে ‘সি এ বি’ লিগ, ‘বেঙ্গল বাইজুস চ্যাম্পিয়নশিপ’ সহ অনেক রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতাতে সে অংশগ্রহণ করেছে এবং অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখন পল্লবীর স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। তার কোচ সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান ‘বাঁকুড়া জেলার ছেলে মেয়েদের মধ্যে ট্যালেন্টের কোন অভাব নেই; আছে সুযোগের অভাব। তার ধারণা পল্লবী একদিন জাতীয় স্তরে খেলবে’। বছর ২৫ এর পল্লবী মাহাতো জানান, পরবর্তীতে তার ইচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে খেলা, তার এই এগিয়ে আসার পথে তার বাড়ির লোক, কোচ সবার ভূমিকাই অনস্বীকার্য – বলেন পল্লবী।