দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পরিবারের উত্তরসূরি বা বংশধর দাবি করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক বীরসিংহ গ্ৰামের স্মৃতি মন্দিরে।

বীরসিংহ, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ- গত বেশ কয়েক বৎসর নিজেকে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশধর বা উত্তরসূরী বলে দাবি করে আসছেন অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। রাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশধর বা উত্তরসূরী হিসেবে দেখা গেছে তাকে। বিভিন্ন জায়গায় পোষ্টারে অমিতাভ বাবুর ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর উত্তর পুরুষ বা বংশধর। যা নিয়েই ক্ষুব্ধ বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশধর তথা ঈশান চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশান চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে কেদারনাথ বন্দোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় ডঃ পরমেশ ভট্টাচার্য্য। এই নিয়েই আজ বীর সিংহগ্রামের স্মৃতি মন্দিরে, দুইপক্ষের মধ্যে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তুমুল তর্জা। প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি অভিযোগ করেন অমিতাভবাবু, বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশের কেউ নন উনি মিথ্যা প্রচার করছেন। উনি বলেন বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রচার বিমুখ ছিলেন, তাই আমরা কখনো সামনে আসিনি, কিন্তু আজ এই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুরাগীদের সামনে এই মিথ্যাটাকে প্রকাশের জন্য আজ এসেছি।

প্রসাদবাবু বলেন বিদ্যাসাগর মহাশয় কে নিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। এটা তীব্র নিন্দা জনক ও লজ্জার। অমিতাভ বাবুকে অনুরোধ করবো আপনি যাতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর বা উত্তরসূরী না বলেন। এ বিষয়ে ডঃ পরমেশ ভট্টাচার্য বলেন উনি যদিও বিদ্যাসাগর মহাশয় এর চার মেয়ের কোনো পরিবারের সদস্যও নন। বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশ তালিকায় কোথাও অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেই তাহলে উনি কি করে বংশধর বা উত্তরসূরী হতে পারেন। তাই আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ, মহকুমা শাসক, সবাইকে জানিয়ে এখানে এসেছি সত্যিটা প্রকাশের জন্য। এবং এখানে অমিতাভ বাবুও আছেন ওনাকেও বলেছি উনি সঠিক পরিচয় দিতে পারেন নি।

তাই ভুলটা স্বীকার করুক, সত্যটা সবার জানা দরকার। উনি যদি পরবর্তী ক্ষেত্রে উত্তর পুরুষ বা বংশধর হিসেবে লিখেন তাহলে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী আমরা আইনত ব্যবস্থা নেব। তবে এই বিষয়ে অমিতাভ বাবু প্রথমে বলেন আমি বিদ্যাসাগর মহাশয় এর মেজ মেয়ে দিক থেকে দূর সম্পর্কের আত্মীয়। লতা পাতায় জড়িয়ে আছি ওনার বংশের সাথে। তবে পরে বলেন আমি ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাবধারাকে প্রচার করে বেড়াচ্ছি আর সেই দেখেই কেউ যদি উত্তরসুরী বা বংশধর লেখেন সেখানে আমার কিছু করার নেই।

উনি বলেন বিদ্যাসাগর মহাশয় এর পরিবারের পক্ষ থেকে আপনারা আমাকে একটা লিস্ট করে দেবেন আমি কোনটা করতে পারব কোনটা করতে পারব না, আমাকে কি শাস্তি দেবেন দিন আপনারা। বিতর্কের শেষে অমিতাভ বাবু স্বীকার করেন আমি বিদ্যাসাগর পরিবারের কেউ নয়। আমি আজ থেকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর বা উত্তরপুরুষ লিখবো না। তবে এই বিষয়ে স্মৃতি মন্দির কমিটির সেক্রেটারি শক্তিপদ বেরা বলেন বীর সিংহ বাসীর মনে একটা প্রশ্ন ছিল অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় কে? অমিতাভ বাবু ২০২১ সালে যখন সমাজসেবা মূলক কাজ করতে আসেন, তখন থেকে উনার সাথে আলাপ; উনি বলেন উনি বংশধর বা উত্তর পুরুষ। আমরা বলি কিভাবে?

উনি বলেন আমি মেয়ের দিক থেকে; আমরা যাচাই করি নি। অমিতাভ বাবু ভালো কাজ করেছেন। তবে এখন যখন বিতর্ক হয়েছে বিতর্কের অবসান করতে হবে। উনি স্বীকার করেছেন যে উনি বিদ্যাসাগরের বংশধর নন। প্রসাদ বাবু এসছেন বিদ্যাসাগর মহাশয় ছোট ভাইয়ের ঈশনচন্দ্রের পরিবারের বংশধর। আমরা স্মৃতি মন্দিরে তরফ থেকে বলব বিদ্যাসাগর মহাশয় এতটাই মহান; তার উত্তর পুরুষ বা বংশধর বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বড় হতে হবে এটা না করলেই ভাল হয়। আমরা সবাই বলবো, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদর্শ প্রচারক সেই হিসেবে লিখলেই ভালো হয়। বিদ্যাসাগরের ফ্লেক্সে নিজের ছবি দিয়ে এটা করা কারও পক্ষে ঠিক নয়। এটা সমাধান হয়ে গেছে। আমরা অনুরোধ করব স্মৃতি মন্দির তরফ থেকে কেউ যাতে না বিদ্যাসাগর মহাশয় এর বংশধর বা উত্তরপুরুষ বলে লেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *