সাগরদিঘী ড্যামেজ কন্ট্রোল? নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ তৃণমূলের।

পশ্চিম মেদিনীপুরঃ- সাগরদিঘির উপনির্বাচনে শাসকদলের ফল খারাপ হয়েছে ৷ তা নিয়ে পর্যালোচনার মাঝেই সব জেলাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশ রাজ্য তৃণমূলের৷  শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে তাই সংখ্যালঘু সেলের ঘাটাল জেলা নিয়ে সম্মেলনের পরে রবিবার মেদিনীপুর জেলা সংখ্যালঘুসেলের কর্মী সম্মেলন হল মেদিনীপুরে৷ সেখানে উপস্থিত দলের নেতাদের সাগরদিঘির উপমা টেনে বিভিন্ন ভাবে হুশিয়ারী দিলেন নেতা মানস রঞ্জন ভুঞা৷

মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে সংখ্যালঘু সেলের কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল রবিবার বিকেলে৷  সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার মুসলিম সংখ্যালঘু নেতা৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংখ্যালঘু সংগঠনের রাজ্যস্তরের কয়েকজন নেতাও৷  তাদের সামনেই দলের নেতা কর্মীদের বিভিন্ন ভাবে সক্রিয় হতে পরামর্শ দিয়ে হুশিয়ারী দেন মানস ভুঞা৷

তিনি বলেন-“বিজেপি সিপিআইএম বলতে শুরু করেছে -দেখো সাগরদীঘিতে সংখ্যালঘুরা শাসক দল থেকে সরে গেছে। না রে ভাই, সংখ্যালঘুরা দিদির সঙ্গেই আছে। ভারতীয় জনতা পার্টি দেশটাকে ভাঙতে চায়। যেখানে যেখানে বিজেপি দেশে রয়েছে সেখানেই সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মমতাজ আর মমতাকে পার্থক্য করতে দেবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্ব ধর্মের ঐক্যতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক ব্যানার্জি। সিপিআইএম কংগ্রেস বিজেপি এক হয়েছে। পাড়ায় অঞ্চলে ব্লকে নজর রাখুন। আমি বিরাট নেতা, বাড়িতে বসে আছি, ব্লকে যাচ্ছি না, মহল্লাতে যাচ্ছি না। মনে রাখবেন প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় কমিটি করতে হবে। মহিলা যুবক যুবতী সকলকে যুক্ত করতে হবে। শুধু নিজেদের ছবি দিয়ে প্রচার চলবে না। নিজেদের ছবি কম দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের ছবি দিন। যদি কোন নেতা কোন মিটিং না করে, ব্লকে অঞ্চলে না যায়, আমাদের জানান। আমরা সাংগঠনিক স্তরে ব্যবস্থা নেব। প্রতিটি ব্লকে সংখ্যালঘুদের নিয়ে সমাবেশ করতে হবে।”

সাগরদিগি উপনির্বাচনী ফলাফলের পরে গত ৮ মার্চ খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ টিএমসি-কে কটাক্ষ করেছিলেন সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে৷  তিনি বলেছিলেন- “মমতা ব্যানার্জির করার কিছু নেই আর। যাদের উপর ভরসা করে জিতছিলেন তারা সাগর দিঘিতে খেলা দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলার মুসলমানদের উনারা কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি নওশাদকে যেভাবে বিনা দোষে হেনস্থা করেছেন ৪০ দিন জেলে ভরে রেখে, এটাতে ওই সমাজের মধ্যে একটু নাড়া দিয়েছে। তারা বুঝেছেন তাদের কেনা গোলাম করে রাখা হয়েছে”।

তারই পাল্টা জবাবা দিয়েছেন রবিবার মানস ভুঞা ৷ তিনি বলেন- “একেবারে বাজে কথা বিরোধীদের, সাগরদিঘী ইসুতে নেত্রী দলীয় নেতাদের অনুসন্ধান করতে দিয়েছেন। তারা অনুসন্ধান করেছেন। প্রাথমিকভাবে যা বোঝা গিয়েছে-সেখানে স্থানীয় স্তরে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি ঘটেছে। সংখ্যালঘুরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন, আছে থাকবে। যারা মন্দির মসজিদ মমতা আর মমতাজ এর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে সংখ্যালঘুরা কখনোই সেই বিজেপির সঙ্গে যাবে না। সিপিআইএম সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করেছে তাদের দলের জন্য। কখনোই উপকার করেনি। একমাত্র দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির যে নেতারা সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলছেন তারা সবার আগে উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ টা ঠিক করুন। সেখানে মুসলিম বেশি হলেও আর্থিক বরাদ্দ কম তাদের জন্য, তুলনায় এ রাজ্যে অনেক কম মুসলিম, তবুও তাদের জন্য আর্থিক বরাদ্দ অনেক বেশি। সি এ এ এবং এনআরসির নাম করে ১৯ লক্ষ সংখ্যালঘুকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্ধ করে রেখেছে বিজেপি। বিজেপি এলে এই রাজ্যেও অনুরূপ ক্যাম্প করবে। সংখ্যালঘুরা এটা কখনোই চাইবে না”৷

পাশাপাশি গতকাল‌ও‌ ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যা লঘু সেলের জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেবরা অডিটোরিয়াম হলে । পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই  সম্মেলন।, এই  সম্মেলন থেকে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ খান  বলেন,  সাগরদীঘি থেকে আমরা শিক্ষা পেয়েছি; তবে সাগরদীঘির মানুষ বুঝতে পারবে তবে ভুল করেছে, তবে সকালে ভুল করলে সন্ধ্যায় ঠিক হয়ে যাবে, এই সম্মেলনে  উপস্থিত ছিলেন,  মন্ত্রী মানষ  রঞ্জন ভুঁইয়া, রাজ্যসভার সাংসদ সেক নাদিমূল হক, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ খান, ঘাটাল সাংগঠনিক সংখ্যা লঘু সেলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও অন্যান্য নেতৃতবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *